আপনার গাড়ি আপনাকে বলে – “বাবা, আজ রাস্তা জ্যাম, অন্য রাস্তা নাও!” – IoT সহজ ভাষায়
- গাড়ি: ধরুন আপনি অফিসে আছেন। হঠাৎ আপনার গাড়ি ফোনে বলে – “বাবা, আজ রাস্তা জ্যাম, অন্য রাস্তা নাও!” আপনি অবাক হয়ে যান, কিন্তু কাজে লাগে।
- ওয়াশিং মেশিন: সকালে ভাবছেন জামা শুকিয়ে গেছে কি না। ওয়াশিং মেশিন ফোনে বলে – “তোমার জামা শুকিয়ে গেছে, এবার তুলে নাও!” একদম বাস্তবের মতো!
- ফ্রিজ: আপনি বাজারে। ফ্রিজ ফোনে বলে – “এই আপেল একটু আগে পচে যাবে, দেরি কোরো না!” আপনি হাসতে হাসতে নতুন আপেল কিনে ফেলেন।
- লাইট: ঘরে কেউ লাইট জ্বালিয়ে বা বন্ধ করেছে। লাইট ফোনে নোটিফিকেশন পাঠায় – “দূরে থেকে বন্ধ করা হলো।” মজা লাগছে না কি?
- স্মার্ট ওয়াচ: ওয়াচ বলে – “হ্যায়, তুমি আজ ৫০০০ ধাপ হাঁটলে!” আপনি অবাক হয়ে দেখেন সত্যিই হাঁটেছেন।
IoT কি?
IoT মানে হলো – আপনার চারপাশের জিনিসগুলো ইন্টারনেটে যুক্ত হয়ে স্মার্ট হয়ে যায়। তারা নিজে কাজ করতে পারে, আপনাকে তথ্য দেয়, এবং জীবন সহজ করে। আপনার গাড়ি, লাইট, ওয়াশিং মেশিন, ফ্রিজ, ওয়াচ – সব এখন “বুদ্ধিমান”।
IoT-এর উৎপত্তি ও ইতিহাস
IoT ধারণাটি প্রথমে ১৯৯৯ সালে MIT-এর গবেষক কেভিন অ্যাশটন প্রবর্তন করেন। তবে এর বাস্তব প্রয়োগ শুরু হয়েছিল ১৯৮০-এর দশকে, যখন কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কোকাকোলা ভেন্ডিং মেশিনকে ইন্টারনেটে সংযুক্ত করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা জানতে পারত মেশিনে কোকাকোলা আছে কিনা এবং তা ঠান্ডা আছে কিনা। এরপর ২০০০-এর দশকে RFID প্রযুক্তির উন্নতির সাথে IoT-এর ধারণা আরও বিস্তৃত হয়। ২০১০ সালের পর স্মার্টফোন, ক্লাউড ও ৫জি প্রযুক্তির সঙ্গে IoT বিস্ময়করভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ্বব্যাপী IoT কতদূর এগিয়েছে?
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৪.৪ বিলিয়ন IoT ডিভাইস সক্রিয় রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা প্রায় ২৯.৪ বিলিয়নে পৌঁছানোর পূর্বাভাস রয়েছে। স্মার্ট হোম, স্মার্ট সিটি, স্মার্ট ফার্মিং, স্মার্ট হেলথকেয়ার – সব ক্ষেত্রেই IoT বিপ্লব ঘটিয়েছে।
বাংলাদেশে IoT এর অবস্থা
বাংলাদেশে IoT উন্নয়ন শুরু হয়েছে ২০১০-এর পর থেকে। সরকার “ডিজিটাল বাংলাদেশ” উদ্যোগের আওতায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০২০ সালে “ন্যাশনাল ইন্টারনেট অব থিংস (IoT) স্ট্র্যাটেজি” প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবহন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে IoT-এর ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্য রয়েছে।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (BCC) IoT, ব্লকচেইন, রোবোটিক্স ও সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রায় ২,৩৬,০০০ জনকে দক্ষতা প্রদান করেছে।
বাংলাদেশে বাস্তব উদাহরণ
- ঢাকায় স্মার্ট স্ট্রিটলাইটিং সিস্টেম – বিদ্যুৎ সাশ্রয় ও রাস্তার আলো স্বয়ংক্রিয়।
- ওয়াটার-লগিং ডিটেকশন সিস্টেম – ড্রেনেজ মনিটর করে জরুরি সতর্কতা পাঠায়।
- স্মার্ট কৃষি – মাটি, জলবায়ু ও ফসলের তথ্য সংগ্রহ করে কৃষকদের সাহায্য।
কেন মজা ও চমকপ্রদ?
ভাবুন, আপনি বাড়িতে নেই আর আপনার গাড়ি বা ওয়াশিং মেশিন আপনাকে সরাসরি কথা বলছে! IoT আমাদের জীবনকে আরামদায়ক, মজার এবং স্মার্ট করে তোলে। আপনি একবার ব্যবহার করলে বুঝবেন, কতটা চমকপ্রদ এই প্রযুক্তি।

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন