ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে গিয়ে যে সমস্যাগুলো হয় ও তার সমাধান!

বাস্তব চিত্র

ভাবুন তো – আপনি একটি নতুন মোটরসাইকেল বা গাড়ি কিনেছেন। রাস্তায় নামার আগে আনন্দে ভরপুর, কিন্তু প্রথমেই শুনতে হলো 👉 “ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে হবে।”

কথাটা যত সহজ শোনায়, বাস্তবে ততটাই জটিল মনে হয়। অনেকে মাসের পর মাস ঘুরছেন লাইসেন্স করতে গিয়ে, কারো কাগজপত্রে সমস্যা হচ্ছে, আবার কেউ পরীক্ষার ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছেন।

আমাদের দেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স করা এখনো অনেকের কাছে একটা দুঃসাহসিক অভিযান

ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে গিয়ে সাধারণ যে সমস্যাগুলো হয়

১. অনলাইনে আবেদন করতে না জানা

BRTA এখন অনলাইনে আবেদন নিচ্ছে। কিন্তু সবাই কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার করে ফর্ম পূরণ করতে পারে না। ছবি আপলোড, ফি পরিশোধ, ফর্ম প্রিন্ট – এগুলো অনেকের কাছেই কঠিন মনে হয়।

২. দালালের ঝামেলা

এটা সবচেয়ে বড় সমস্যা। অনেক দালাল প্রলোভন দেখায় 👉 “আপনার লাইসেন্স আমরা করে দেবো, শুধু কিছু অতিরিক্ত টাকা দিন।” ফলাফল – অনেক সময় টাকা হারাতে হয়, আবার ফেক লাইসেন্সও বানিয়ে দেয়।

৩. কাগজপত্রে ভুল

জাতীয় পরিচয়পত্র (NID), ছবি, আবেদন ফর্ম – এদের মধ্যে সামান্য ভুল থাকলেও আবেদন বাতিল হতে পারে। নামের বানান, জন্ম তারিখ, ঠিকানা – এগুলো অবশ্যই মিলিয়ে নিতে হবে।

৪. লিখিত পরীক্ষার ভয়

অনেকেই ভেবে নেন 👉 “লাইসেন্স মানে শুধু টাকা দিলেই পাওয়া যাবে।” কিন্তু BRTA লিখিত পরীক্ষা নেয়। এখানে ট্রাফিক আইন, সাইন, সাধারণ নিয়ম থেকে প্রশ্ন আসে। পরীক্ষায় না পড়াশোনা করে গেলে সহজেই ফেল হয়ে যায়।

৫. ব্যবহারিক পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়া

বাইক বা গাড়ি চালাতে জানলেও ব্যবহারিক পরীক্ষায় অনেকেই নার্ভাস হয়ে যান। লাইন মেনে চলতে না পারা, বাঁক নেওয়ার সময় সিগনাল না দেওয়া, পার্কিংয়ে ভুল করা – এগুলোর কারণেই অনেকেই ফেল করেন।

৬. দীর্ঘ সময় অপেক্ষা

আবেদন করার পর লাইসেন্স হাতে আসতে অনেক সময় লেগে যায়। কাগজ যাচাই, কার্ড প্রিন্ট – এসব কারণে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়।

৭. নবায়ন করতে ভুলে যাওয়া

লাইসেন্স একবার পেলেই আজীবন থাকে না। নির্দিষ্ট সময় পর নবায়ন করতে হয়। অনেকে নবায়নের তারিখ ভুলে যান, ফলে জরিমানা গুনতে হয়।

এসব সমস্যার সমাধান কীভাবে করবেন

  • অনলাইন আবেদন নিজে করুন: BRTA–র ওয়েবসাইট ব্যবহার করা কঠিন নয়। ইউটিউব বা গাইডলাইন দেখে ধাপে ধাপে করলে সহজেই ফর্ম পূরণ করতে পারবেন।
  • দালাল এড়িয়ে চলুন: নিজে আবেদন করলে খরচ অনেক কম হবে। দালালের মাধ্যমে করলে ঝুঁকি বেশি।
  • কাগজপত্র যাচাই করুন: আবেদনের আগে জাতীয় পরিচয়পত্র, নাম–ঠিকানা, ছবি সব মিলিয়ে নিন।
  • লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিন: প্রশ্নগুলো মুখস্থ করার দরকার নেই, শুধু ট্রাফিক সাইন আর নিয়মগুলো বুঝে পড়লেই যথেষ্ট। পোস্টের শেষে লিংক দেওয়া আছে, সেখান থেকে সব প্রশ্ন–উত্তর পাবেন।
  • ব্যবহারিক পরীক্ষায় শান্ত থাকুন: পরীক্ষার সময় নার্ভাস না হয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে চালান। ধীরে ধীরে এগোন, সিগনাল দিতে ভুলবেন না।
  • ধৈর্য ধরুন: BRTA–র কাজ একটু সময়সাপেক্ষ। তাই ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।
  • নবায়নের তারিখ মনে রাখুন: লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নবায়ন করুন। চাইলে মোবাইলে রিমাইন্ডার দিয়ে রাখতে পারেন।

ড্রাইভিং লাইসেন্স করার ধাপ

  1. অনলাইনে আবেদন করুন (BRTA ওয়েবসাইটে)
  2. নির্দিষ্ট ফি পরিশোধ করুন
  3. লার্নার লাইসেন্স সংগ্রহ করুন (প্রায় ৩ মাসের জন্য)
  4. লিখিত পরীক্ষা দিন
  5. ব্যবহারিক পরীক্ষা দিন
  6. সব ঠিক থাকলে হাতে পাবেন আসল লাইসেন্স

লাইসেন্স ফি

  • মোটরসাইকেল লাইসেন্স: প্রায় ৩,০০০ – ৪,০০০ টাকা
  • প্রাইভেট কার: ৬,০০০ – ৭,০০০ টাকা
  • হেভি ভেহিকল (বাস/ট্রাক): ৮,০০০ – ১০,০০০ টাকা
  • নবায়ন ফি: প্রতি ৫ বছর পর

শেষ কথা

ড্রাইভিং লাইসেন্স করা আসলে কঠিন কিছু নয়। তবে সমস্যা হলো – অনেকেই শর্টকাট খুঁজে দালালের পেছনে সময় ও টাকা নষ্ট করেন। আপনি যদি নিয়ম মেনে ধাপে ধাপে এগোন, তাহলে খুব সহজেই আপনার কাঙ্ক্ষিত লাইসেন্স হাতে পাবেন।

ড্রাইভিং লাইসেন্স শুধু একটি কার্ড নয়, এটি দায়িত্বশীল চালকের পরিচয়। তাই আর দেরি না করে এখনই নিজের লাইসেন্সের কাজ শুরু করে দিন।

📌 অতিরিক্ত রিসোর্স

👉 ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার প্রশ্ন–উত্তর পেতে এখানে ক্লিক করুন: ডাউনলোড প্রশ্ন-উত্তর

👉 ট্রাফিক সাইন ও তাদের ব্যাখ্যা ছবিসহ দেখতে এখানে ক্লিক করুন: ট্রাফিক সাইন গাইড

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

জীবনে কোনোদিন ডাক্তার দেখাতে হবে না!

১০ হাজার টাকার মধ্যে স্মার্টফোন: অপনার পছন্দের ফোনটি বেছেনিন