বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা: চ্যালেঞ্জ, সুযোগ আর আমাদের করণীয়

 


শিক্ষা নিয়ে কথা বললে আমরা সবাই একমত যে—শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, আমরা এই বাক্যটা মুখে যতটা বলি, কাজে ততটা বাস্তবায়ন করতে পারি না। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে অনেক আলোচনা, অনেক বিতর্ক হয়, কিন্তু পাঠকেরা প্রায়শই প্রশ্ন করেন: “আসলেই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কোথায় দাঁড়িয়ে?”

আজকের এই ব্লগে আমরা শুধু সমস্যার কথা বলব না, বলব সম্ভাবনার কথা, আলাপ করব করণীয় নিয়ে। সহজ ভাষায়, বন্ধুর মতো করে সব কিছু সাজিয়ে নিচ্ছি যাতে আপনি পড়তে পড়তে ভাবতে পারেন, “হ্যাঁ, এগুলো তো সত্যিই আমার চারপাশেই ঘটছে!”

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সবাইকে শিক্ষার আওতায় আনা। তখন মানুষ দরিদ্র, স্কুল কম, শিক্ষক সংকট ছিল ব্যাপক। কিন্তু ধীরে ধীরে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক হলো, মেয়েদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হলো। একসময় আমরা দেখলাম, বিনামূল্যের বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে বছরের শুরুতেই। এ যেন এক ধরনের উৎসব, “বই উৎসব”।

তবে ইতিহাস বলছে, আমরা এখনও মানের দিকে পিছিয়ে আছি। শুধু স্কুলে ভর্তি করানোই শিক্ষা নয়, আসল শিক্ষা হলো মানসম্মত শেখা। এই জায়গাটাই এখনো আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

বর্তমান চিত্র: কোথায় দাঁড়িয়ে আছি আমরা?

বাংলাদেশের শিক্ষার বর্তমান চিত্র অনেকটা মিশ্র। একদিকে গ্রামে-গঞ্জে প্রায় প্রতিটি শিশু স্কুলে যায়, মেয়ে শিশুরা পড়াশোনায় আগ্রহী হচ্ছে, অন্যদিকে শহরের নামী-দামী স্কুলগুলো আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে শিক্ষা দিচ্ছে। এ যেন দুই ভিন্ন পৃথিবী।

  • শহরের শিক্ষার্থী কোডিং শিখছে, গ্রাফিক্স ডিজাইন করছে।
  • গ্রামের শিক্ষার্থী এখনো সঠিকভাবে ইংরেজি উচ্চারণ শিখতে পারছে না।
  • চাকরির বাজারে ডিগ্রির চেয়ে দক্ষতা বেশি চাওয়া হচ্ছে।

তাই বলা যায়, শিক্ষা আছে বটে, কিন্তু সমানভাবে বিতরণ হয়নি।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার কিছু ইতিবাচক দিক

সমস্যা যতই থাকুক, বাংলাদেশ শিক্ষা খাতে কিছু সাফল্যও পেয়েছে। যেমন—

  1. প্রাথমিক শিক্ষা প্রায় সবার জন্য উন্মুক্ত।
  2. নারী শিক্ষায় অংশগ্রহণ বেড়েছে অনেক।
  3. ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে, ই-লার্নিংয়ের প্রসার ঘটছে।
  4. উচ্চশিক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েছে।

এগুলোই আমাদের শক্তি, এগুলোই দেখাচ্ছে আমরা চাইলে আরও ভালো করতে পারব।

শিক্ষা ব্যবস্থার বড় সমস্যা কোথায়?

আসুন এবার খোলাখুলি বলি। পাঠকেরা নিশ্চয়ই ভাবছেন—“যেখানে এত সাফল্য, সমস্যা আবার কোথায়?” আসলে সমস্যা আছে এবং সেগুলো অস্বীকার করার উপায় নেই।

১. মানসম্মত শিক্ষার অভাব

পরীক্ষা দিয়ে পাশ করানো হচ্ছে, কিন্তু শিক্ষার্থী আসলেই শিখছে কি? মুখস্ত নির্ভর শিক্ষায় আমরা এতটাই ডুবে গেছি যে, বাস্তব জীবনের সমস্যার সমাধান করতে শিখতে পারছি না।

২. শহর-গ্রামের বৈষম্য

ঢাকার এক শিক্ষার্থী যেভাবে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিখছে, গ্রামের শিক্ষার্থী এখনও ব্ল্যাকবোর্ড আর চকেই আটকে আছে। এই বৈষম্য আমাদের জন্য মারাত্মক।

৩. দক্ষতা আর কর্মসংস্থানের মিল নেই

হাজার হাজার গ্রাজুয়েট বের হচ্ছে, কিন্তু কাজ পাচ্ছে না। কারণ, তাদের শেখানো হচ্ছে বইয়ের তত্ত্ব, কিন্তু বাস্তব জীবনের কাজের দক্ষতা দেওয়া হচ্ছে না। ফলে তৈরি হচ্ছে শিক্ষিত বেকার

৪. শিক্ষক সংকট

একজন ভালো শিক্ষক একটা পুরো প্রজন্মকে বদলে দিতে পারে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশে শিক্ষক সংকট প্রবল। শুধু সংখ্যা নয়, মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব আরও বড় সমস্যা।

ভবিষ্যতের পথ: আমরা কী করতে পারি?

সব সমস্যা নিয়েই বসে থাকলে হবে না। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে।

  • শিক্ষায় দক্ষতাভিত্তিক পাঠক্রম চালু করতে হবে।
  • গ্রামের স্কুলগুলোতে প্রযুক্তি পৌঁছে দিতে হবে।
  • শিক্ষক প্রশিক্ষণ আরও জোরদার করতে হবে।
  • ডিগ্রির পাশাপাশি হাতে-কলমে শেখার সুযোগ বাড়াতে হবে।
  • শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও কাজ করতে হবে।

এগুলো যদি করা যায়, তাহলে শিক্ষার্থীরা শুধু পাশ করবে না, আসলেই দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।

শেষ কথা

শিক্ষা কোনো বিলাসিতা নয়, শিক্ষা হলো আমাদের টিকে থাকার অস্ত্র। আজকে যে জাতি শিক্ষায় বিনিয়োগ করে, আগামীকাল সেই জাতিই বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সমস্যা আছে, কিন্তু সমাধানের সুযোগও আছে। শুধু প্রয়োজন ইচ্ছাশক্তি আর সঠিক পরিকল্পনার।

তাই প্রশ্নটা এখন আমাদের সবার কাছে: “আমরা কি শুধু পাশ করানো শিক্ষা চাই, নাকি সত্যিকারের মানসম্মত শিক্ষা চাই?”

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

জীবনে কোনোদিন ডাক্তার দেখাতে হবে না!

১০ হাজার টাকার মধ্যে স্মার্টফোন: অপনার পছন্দের ফোনটি বেছেনিন

ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে গিয়ে যে সমস্যাগুলো হয় ও তার সমাধান!