গত পর্বে আমি মোবাইল কোম্পনিগুলোর কিছু মার্কেটিং প্রসেস সম্পর্কে জানিয়েছিলাম, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা সাধারন রা একেবারেই বোকা হয়ে যাচ্ছি। ক্যামেরা ও ভিডিও রেকর্ডিং এর ক্ষেত্রে মোবাইল কোম্পানিগুলো আমাদের সাথে যেভাবে মার্কেটিং করছে সেটার ব্যাপারে বিস্তারিত জানিয়েছিলাম। এই পর্বে আমি ব্যাটারি, রেম ও প্রসেসর এর মার্কেটিং এর ব্যাপারে জানাবো। আমার পোস্টের প্রথম পার্ট টি পাবেন এই লিংকে।
ব্যাটারি ও চার্জিং
আজকাল আমরা আমাদের ফোনে 4000, 5000 এমন কি 6000 mah এর battery পেয়ে থাকি। কিন্তু একটি ব্যাটারি কে ভাল প্রমাণ করার জন্য mah এর পাশাপাশি। আরও গরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। সেটির নাম হচ্ছে Charge cycle. জী, আপনরা অনেকেই হয়তো নাম টি প্রথম শুনছেন। তাই চার্জ সাইকেল এর ব্যাপারে নীচে কিছু লিখে বুঝিয়ে দিচ্ছি।
Charge cycle কি?
Charge cycle বলতে বুঝায় যে, একটি ব্যাটারী সর্বোচ্চ কতবার ফুল চার্জ এবং সর্বোচ্চ কতবার চার্জ শূন্য হতে পারে। প্রতিটি ব্যাটারী এর নির্ধারিত নিদ্দিষ্ট পরিমাণ চার্জ সাইকেল থাকে। সেই চার্জ সাইকেল পরিপূর্ণ ব্যাটারী একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়।
উদাহরণ হিসেবে:- মনেকরি আমার কাছে একটি ব্যাটারী আছে যার Charge Cycle হচ্ছে 100 times. অর্থাৎ ১০০ বার ফুল চার্জ এবং শূন্য চার্জ হবার ব্যাটারী টি নষ্ট হয়ে যাবে।
এবার চলে আসি মূল টপিকে। তার আগে বলে দিচ্ছি এই ছোট্ট charge cycle এর ব্যাপারে আমি YouTube এও কোনো ভিডিও পায়নি।
আসলে আমরা যেই ব্যাটারী গুলো পাই 4000, 5000 এবং 6000 mah এর মধ্যে। এগুলোতে কম হলেও ১০০০ times charge cycle এর প্রয়োজন হয়। কিন্ত আমাদেরকে দেওয়া হয় সর্বোচ্চ 300-400 times charge cycle. আর এটা কখনো মোবাইল কোম্পানীরা তারা মেনসন ও করেনা।
এবার চার্জিং এর কথায় আসি। আজকাল আমরা 45 watt 100watt এবং 120 watt এর ও চার্জিং দেখি।কিছু কিছু ফোন তো কয়েক সেকেন্ড এই 40% চার্জ হয়ে যায়। কিন্তু তাঁর পর কতক্ষন চার্জ নেয় সেটা জানেন কি? আর সেটা মেনসন করা হয়না কেনো?
আবার কিছু কিছু ফোন কয়েক মিনিটের মধ্যেই ১০০% হয়ে যায়। কিন্তু তাঁর পরেও আরো 25 মিনিট চার্জ হয় কিভাবে? চার্জ যদি কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফুল হয়ে যায় তাহলে আরো 25 মিনিট ফোন এ চার্জিং এর কাজ রানিং থাকে কেন?অর্থাৎ কোনো ফোন কোম্পানি এতো বেশী ওয়াট এর চার্জিং আমাদেরকে দিতে পারেনা। এটা আমাদের কে শুধু দেখানোর জন্যই তৈরী করা হয় যে, কম সময়ে এতো বেশী পরিমাণ চার্জ হয়ে গিয়েছে। সেটা ছাড়া আর কিছুই নয়।
তাছারা যদি আমি ধরে নেই কোনো মোবাইল সত্যিই ১২০ ওয়াট এর চার্জ হয়। তাহলে ধরে নিন যে ওই ব্যাটারী কখনোই বেশিদিন টিকতে পারে না। কারন ওয়াট হচ্ছে একটি ব্যাটারী এর সবচেয়ে বড়ো শত্রু। ওয়াট যতই বেশী হবে একটা ব্যাটারী ততই দ্রুত খারাপ হবে। এবং বেশী পরিমাণ ওয়াট এ একটি মোবাইল ব্লাস্টের ও সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করি আমি ব্যাটারী ও চার্জিং এর ব্যাপারে সম্পুর্ন বুঝাতে পেরেছি।
রেম ও প্রসেসর
রেম ও প্রসেসর এর দিকে মিত্থা কথা কিছুটা কম থাকে কারণ ইহার ব্যাপারে সকল কমবেশি জানা আছে। তারপরেও কিছুটা বলে দিচ্ছি। মোবাইল এ বেশির ভাগই দেখা যায় l 8 GB ram আবার 8 core processor যেটা Redmi ফোনে থাকলে মাত্র 20000 টাকার মধ্যই পাওয়া যায় এবং অন্যান্য ফোনে থাকলে দাম হয় 30000 টাকার উপরে। এমন টা কেনো?
মূল বিষয় টি চিপসেট। রেম তিন জিবি কিন্তু চিপসেট ভালো থাকে তাহলে সেটা 10 জিবি রেম ও ১০ কোর প্রসেসর কে বিট করে দিতে পারে স্পীড এর দিক দিয়ে।
Ai এবং ফটোশুট
আজকাল অনেক ফোনে দেখা যায় ai Camera অথবা ai স্পিকার। যদিও এইখানে ai এর নাম ও নিশান থাকেনা। আমাকে যতই বড়ো বড়ো প্রমাণ দেক আমি কখনই বিশ্বাস করবনা যে ফোনে ai আছে।
আর ai এর চেয়েও বড়ো মিত্থা কথা হচ্ছে অনেক website এ ছবি তুলে দেওয়া থাকে যে এটা অমুক ফোন থেকে নেওয়া। তারা এইসব ফটো গুলো প্রফেসনাল ক্যামেরা দিয়ে তুলে নীচে তাদের কোনো ফোনের নামে চালিয়ে দেয়। বিশ্বাস না হলে আপনার ফোন থেকে তোলা ছবি ও কোম্পানীর ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া ছবি দুটি মিলিয়ে দেখতেও পারেন।
ফোন ক্রয় নিয়ে আমার দেওয়া কিছু গাইডলাইন।
ভালো ব্র্যান্ড বলতে গেলে সকল ব্র্যান্ড ই ভালো। কোনও ব্র্যান্ড ই খারাপ নয়। শুধুমাত্র কোম্পানীর তৈরী করা কয়েকটি স্পেসিফিক ফোন খারাপ হয় যার কারণে পুরো কোম্পানীর দোষ হয়। তাছারা তারা বিজ্ঞাপন দিতে যেয়ে একটু বেশিই বাড়িয়ে বলে ফেলে যেটার বেশির ভাগই মিত্থা হয়ে থাকে। আমি নিজে যে ফোন টি ব্যাবহার করি(Redmi 10 2022) এটি আমার নিজের চয়েজ করা নয়। এটি মূলত বড়ো ভাইএর গিফট করা ফোন। তাই আমি আপনাকে এই ফোন টি সাজেস্ট করলাম না। আমার গাইডলাইন নিম্নরূপঃ
- ১. 90 HZ রিফ্রেশ রেট ই স্ট্যান্ডার্ড। বেশী হলে 120।
- ২. ভিডিও রেকর্ডিং সর্বোচ্চ হলে 4k নিন।
- ৩. বর্তমানে একটি ফোন ক্যামেরার জন্য 48 অথবা 64 মেগাপিক্সেল ই যথেষ্ট এর কম হলেও সমস্যা নেই।
- ৪. ব্যাটারী যেমন টায় হোক সমস্যা নাই। সমস্যা হলো চার্জিং এ।
- ৫. বেশী ওয়াট চার্জিং না নেওয়া ই ভালো সর্বোচ্চ 20 থেকে 40 ওয়াট নিন। আমার charger 18 ওয়াট। আর যদি স্পেসিফিকেশন এ মেনসন করে যে এতো সময়ের মধ্য এত পার্সেন্ট চার্জ হয়ে সেগুলো ভুলেও নিবেন না। সেগুলো তো পুরাই মিত্থা। মেনসন অনুযায়ী mobile এ চার্জ আছে দেখাবে। মূলত সেই পরিমাণ চার্জ পরিপূর্ণ হবেনা।
- ৬. নতুন কোনো ফিচার আসলে দ্রুতই ফোন টি কিনতে না যেয়ে কম পক্ষে তিন মাস অপেক্ষা করুন। ফিচার টি কার্যকর কি না আগে জানার চেষ্টা করুন। কোন ফোনে কতটুকু কার্যকর সেটা জানুন।
- ৭. Ai যুক্ত ফোন কিনবেন না। ইহা মিত্থা।
- ৮. সবসময় মনে রাখবেন কোম্পানীর ওয়েবসাইট এ দেওয়া ফটো নির্দ্বিধায় অন্য কোনো প্রফেসনাল ক্যামেরা দিয়ে করা। কখনোই সেই ফটো মেনসন করা সেই মোবাইল দিয়ে তোলা হতে পারেনা।
আজ আমি আর কিছু লিখবো না। আমার ফোন কোম্পানি নিয়ে করা এই পোস্টের এটাই সর্বশেষ পর্ব। এর পরে আর কোনো পর্ব আসবেনা।ধন্যবাদ।
2 Comments for "দেখুন কিভাবে মোবাইল কোম্পানি গুলো আমাদেরকে বোকা বানাচ্ছে! (পার্ট-২)"
Nice পোস্ট
খুব সুন্দর পোস্ট ইহা